ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনকবলিত গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানির অসহায় পরিবারের ২০ নারী পেলেন সেলাই মেশিন। দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা এই নারীদের বিষণ্ন মুখে ফুটল হাসির ঝিলিক। আজ রবিবার দুপুরে গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে ওই নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পূর্ব বাটিকামারীর চরের শাহনাজ বেগম বলেন, ‘বান বন্যা, নদীভাঙনে সর্বস্ব হারিয়েছি।
স্বামী মো. নাজমুল হোসেন অবস্থাপন্ন মানুষের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন। চাষের খরচ, মালিককে ফসলের ভাগ দেওয়ার পর বড়জোড় তিন-চার মাসের খোরাকি জোটে। তারপর স্বামী-স্ত্রী গায়েগতরে খেটে চার ছেলেমেয়েসহ ছয়জনের সংসার টানি। বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর উপহার হিসেবে পাওয়া এই সেলাই মেশিনটি বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিল।’
আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির মো. আ. করিম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুন্নবী টিটুল, জেলা যুবদল সভাপতি রাগিব হাসান চৌধুরী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি ফেরদৌস সরকার রুম্মান, গাইবান্ধা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিসুজ্জামান মোনা ও যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ রোকনুজ্জামান। এ সময় শুভসংঘের জেলা কমিটির সভাপতি হুমায়ুন আহমদ বিপ্লব ও সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ বেগমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কালে কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি অমিতাভ দাশ হিমুনের সঞ্চালনায় সূচনা বক্তব্যে শুভসংঘের কেন্দ্রীয় পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, ‘গত তিন বছর থেকে দেশের বিভিন্ন দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা থেকে অসচ্ছল নারীদের খুঁজে বের করে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় সেলাই মেশিন।
সেই ধারাবাহিকতায় চার মাসের প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে কামারজানির নারীরা পেলেন একটি করে সেলাই মেশিন।’
তিনি বলেন, ‘এখন জীবনযুদ্ধে পরিবারকে সাহায্য করবেন তারা। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতি মাসে অন্তত তিনটি করে প্রশিক্ষণকেন্দ্রে সাফল্যের সাথে প্রশিক্ষণ শেষ করা নারীরা পাচ্ছেন সেলাই মেশিন। শুধু নারীদের জন্য নয়, বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় সারা দেশে শুভসংঘ স্কুল নামে ২২টি স্কুল স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থের অভাবে ঝরে পড়া শিশুরা সেই স্কুলে বিনা মূল্যে লেখাপড়া করছে। তাদের স্কুল ব্যাগ, পোশাক, জুতা-মোজাও দেওয়া হচ্ছে। বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্দেশ্য এসব শিশুরা শিক্ষিত হয়ে যেন জীবনের মূল ধারায় আসতে পারে।’
বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘গাইবান্ধা দেশের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার একটি। এখানে নদ-নদীর ভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বিপর্যস্ত। একজন নারী স্বাবলম্বী হলে সেই পরিবারের সন্তানরা সুশিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত হতে পারে। দরিদ্র পরিবারগুলোতে অশান্তি ও দুর্ভোগ দূর হয়। তারা সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতে পারেন। সেলাই প্রশিক্ষণ দুস্থ নারীদের স্বাবলম্বিতার পথে একটি আলোকবর্তিকা হতে পারে।’
জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির মো. আ. করিম এই কার্যক্রমকে ‘মহতী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘অসহায় নরনারীর পাশে দাঁড়ানোর সদিচ্ছা সবার থাকে না। বসুন্ধরা শুভসংঘের কার্যক্রম নতুন ও আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার পথে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।’ তিনি সংশ্লিষ্টদের মঙ্গল কামনা করেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুন্নবী টিটুল বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের এই কার্যক্রম গাইবান্ধার মতো পিছিয়ে পড়া জেলাকে উন্নয়নের ধারায় যুক্ত করবে। যেকোনো ভালো ও মহৎ কাজে যুক্ত থাকতে পারা আনন্দের। এই কর্মকাণ্ড সমাজের বিত্তবানদের নিশ্চয়ই মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রেরণা জোগাবে।’
জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি রাগিব হাসান চৌধুরী নারীদের স্বাবলম্বিতা অর্জনে সহায়তার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে এ রকম ভূমিকা পালন করুক।’
ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফেরদৌস সরকার রুম্মান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার বিপ্লবে যে নতুন বাংলাদেশের উত্থান ঘটেছে তার অগ্রযাত্রায় এ ধরনের পদক্ষেপকে ছাত্রসমাজ অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। তবে দারিদ্র্যপ্রবণ এই এলাকায় সহায়তার প্রয়োজন আরো বেশি। আমরা বসুন্ধরা শুভসংঘকে তাদের কর্মকাণ্ড আরো বিস্তৃত করার আহ্বান জানাই।’
মেশিন উপহার পেয়ে কামারজানির গোঘাট মাঝি পাড়ার গৃহবধূ সরস্বতী দাস আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তার চোখে অশ্রুবিন্দু থাকলেও কণ্ঠে ছিল উচ্ছ্বাস। বললেন, স্বামী হৃদয় চন্দ্র দাস পেশায় মৎস্যজীবী। এই সময়ে নদীতে মাছ কমে যাওয়ায় আয় অনেক কম। তাদের এক মেয়েসহ তিনজনের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। শুভসংঘের প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর এখন তিনি সব ধরনের পোশাক তৈরি করতে পারেন। সেলাই মেশিনটি তার অনেক সাধনার প্রাপ্তি। এখন বাড়ির কাজের পাশাপাশি পোশাক তৈরি করেও আয় করতে পারবেন। এতে তার স্বামীর ওপর চাপ কমবে। মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার স্বপ্নপূরণ হবে।’
নদের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি হারানো জেলে পাড়া তাপসী সরকার, বাঁধের পাশে বসবাসকারী রোজিনা বেগম অনু, নীলা আক্তাররাও সেলাই মেশিন পেয়ে খুশি। রোজিনা বেগম বললেন, ‘অভাবের এই দুঃসহ জীবন থেকে বের হতে চাই। এই সেলাই মেশিনকে অবলম্বন করে এখন ঘুরে দাঁড়াতে চাই।’
আলোচনা পর্ব শেষে অতিথিরা ২০ নারীর হাতে তুলে দেন সেলাই মেশিন।
SOURCE : কালের কণ্ঠশায়েস্তাগঞ্জে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে বসুন্ধরা শুভসংঘের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
Bashundhara Shuvosangho Distributed Food Items Among Underprivileged People in Shayestaganj
আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর- পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা’ আসরের সমাপনী
"Qur'an-er Noor - Powered by Bashundhara" Int'l Hifzul Qur'an Competition Closing Ceremony is Held
সৈয়দপুরে বসুন্ধরা শুভসংঘের সেলাই মেশিন পেলেন অসচ্ছল ২০ নারী
20 Poor Women in Syedpur Receive Sewing Machines from Bashundhara Shuvosangho
Bashundhara Group's Assistance Became a Means of Survival for 20 Women
বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তা বেঁচে থাকার অবলম্বন পেলেন ২০ নারী
গোবিন্দগঞ্জে বসুন্ধরা শুভসংঘের ইফতারসামগ্রী বিতরণ
Bashundhara Shuvosangho Distributes Iftar in Gobindaganj