দিনাজপুর সদর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে বীরগঞ্জ পৌর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অনিন্দ্যসুন্দর গ্রাম মাকড়াই। গ্রামটির পূর্ব দিকটায় সবুজে ঘেরা ঘন শালবন ও নদী এবং পশ্চিম পাশে এশিয়ান হাইওয়ে। বীরগঞ্জের সমতল ভূমিতে আবাস গড়েছে অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন। শিক্ষা ও জীবনমানে অনেক পিছিয়ে আছে এই জনগোষ্ঠী।
দরিদ্রতা এখানকার লোকজনের এগিয়ে যাওয়ার পথে চরম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়া, স্কুলে পাঠানো আকাশকুসুম কল্পনা যেন। তিনবেলা খাবার জোটাতে যেখানে এই লোকজনকে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে সন্তানদের তারা পড়তে পাঠাবেন কিভাবে। তা-ও আবার আশপাশে দু-তিন কিলোমিটারের মধ্যে এমন কোনো স্কুল নেই, যেখানে সন্তানদের পাঠাতে পারে তারা।
এ জন্য এই গ্রামটির সুবিধাবঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। পিছিয়ে পড়া এই মানুষগুলোকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে, তাদের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে এগিয়ে আসে বসুন্ধরা শুভসংঘ। সম্প্রতি সেখানে চালু করা হয় ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল’।
দিনটি ছিল ২৪ জুন।
বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল উদ্বোধন করতে বড় একটি টিমসহ দিনাজপুরে যান একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। দিনাজপুরের বিভিন্ন শাখার শুভসংঘের বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল ও শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান। মেইন রোড থেকে কিছুটা হাঁটার পথ পেরোলেই চোখে পড়বে স্কুলটি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উপজাতি মেয়েরা নেচে-গেয়ে অতিথিদের স্বাগত জানায়। তাদের ঐতিহ্যবাহী এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা সবাইকে মুগ্ধ করে।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সারা দেশে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা স্বপ্ন দেখি একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশের। একটি আলোকিত বাংলাদেশের। শিক্ষিত জাতিই পারে আমাদের আলোকিত বাংলাদেশের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে। আমাদের স্বপ্ন পূরণের সারথি হয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। তাঁর সহযোগিতায় আমরা দশম স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় আমরা বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল করব। জায়গা কিনে আলাদা ভবন করব। সেখানে স্কুল, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, পাঠাগার থাকবে। নারীরা সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ নেবেন, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেবেন। স্বাবলম্বী হয়ে এই দেশের অনগ্রসর নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াবেন, এটাই আমাদের চাওয়া। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা সমাজের মূলধারায় ফিরে আসুক, এটা আমাদের লক্ষ্য। করোনাকালে বসুন্ধরা শুভসংঘ এই এলাকার মানুষের মাঝে এক মাসের করে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে। শীতার্ত মানুষের শীত নিবারণে পাশে দাঁড়ায়েছি আমরা। হাজারের বেশি নারীকে স্বাবলম্বী করতে পেরেছি। এখন যদি এই শিশুদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে পারি, তাহলেই সফলতা আসবে। উপস্থিত অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যত কষ্টই হোক, আপনাদের সন্তানকে নিয়মিত স্কুলে পাঠাবেন। এই শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। এরা বড় হয়ে দেশকে বদলে দেবে। আপনাদের পরিবারের অবস্থাটাও বদলাবে। আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে আপনাদের পাশে আছি। সব সময় সুখে-দুঃখে আমাদের পাবেন আপনারা। একটাই অনুরোধ, সন্তানদের ঠিতমতো স্কুলে পাঠাবেন। তাদের পড়ালেখা করানোর সব দায়িত্ব আমাদের। সবাই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয় ও তাঁর পরিবারের সবার জন্য দোয়া করবেন।’
প্রাথমিকভাবে মাকড়াই গ্রামের ১৪০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল’। নিয়মিত সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দুজন শিক্ষক ও একজন সমন্বয়ক নিয়ে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। অপূর্ব মাডি বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের নিয়মিত শিক্ষার্থী। আট বছরের অপূর্ব এখন রোজ স্কুলে যায়। দরিদ্রতার অজুহাতে অপূর্বকে স্কুলে পাঠাতেন না তার মা-বাবা। বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল চালু হতেই এখানে তাকে ভর্তি করে নেন শুভসংঘের সদস্যরা। এখন প্রতিদিনই স্কুলে আসে অপূর্ব। ক্লাসের পড়া, অন্য শিশুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড়ে দিন কাটে তার। অথচ কিছুদিন আগেও স্কুলে যেত না সে। তাকে লেখাপড়া করানোর স্বপ্ন ছিল মা-বাবার কাছে অলীক কল্পনা। তার মতোই অনুপন মাডি, আবদুল বারিসহ শতাধিক শিক্ষার্থী দিন শুরু করে জাতীয় সংগীত আর পিটির মাধ্যমে। ছোট্ট অপূর্ব বলে, ‘আমরা সকালে স্কুলে পড়াশোনা করি এবং পড়া শেষ করে পরিবারের কাজ করি। আমরা এখানে পিটি করি, কবিতা পড়ি। ম্যাডাম আমাদের অনেক আদর করেন।’
বসুন্ধরা শুভসংঘকে ধন্যবাদ জানিয়ে অভিভাবক মিনি মুরমু বলেন, ‘পাশেই বড় শালবাগান পার হয়ে ছোট শিশুরা স্কুলে যেতে ভয় পায়। আরেকটি স্কুল আছে, সুজালপুর হাইওয়ে রাস্তা পার হয়ে যেতে হয়। সেটিও এত দূর যে ছোট বাচ্চাদের যাওয়া-আসার পথে নানা আশঙ্কায় থাকে পরিবার। তাই কাছাকাছি স্কুল হওয়ায় অনেক ভালো হয়েছে। আমরা সন্তানদের নিশ্চিন্তে স্কুলে দিতে পারছি।’ আরেকজন অভিভাবক রিতা হেমরম বলেন, ‘আমরা এই স্কুল পেয়ে অনেক খুশি। আমাদের আর দূরে যেতে হবে না। শিশুরা এখানে সুন্দরমতো লেখাপড়া করতে পারবে। এই স্কুলের কারণে আমাদের মতো অসচ্ছল পরিবারের শিশুরা পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে। এখানে বিনা মূল্যে বই, খাতা, কলম দেওয়া হয়। আমরা বসুন্ধরার কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের এই সহায়তার জন্য আমরা ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখছি।’
বসুন্ধরা শুভসংঘকে ধন্যবাদ জানিয়ে দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপকে সাধুবাদ জানাই এ ধরনের মহতী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য। তাদের এই স্কুলের কারণে সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পাবে। অনগ্রসর শিশুদের আলোর পথ দেখাচ্ছে তারা। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই ধন্যবাদযোগ্য। বসুন্ধরা গ্রুপ শুরু থেকেই সমাজের জন্য কাজ করে আসছে। আমি দেখেছি করোনায়, শীতে, বন্যায় তারা মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সমাজের সবার উচিত তাদের অনুসরণ করা। উন্নত ও শিক্ষিত একটি জাতির যে স্বপ্ন আমরা দেখি, তা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যেতে পারব তখনই, যখন সবাই এগিয়ে আসবে। বসুন্ধরা গ্রুপের এই উদ্যোগের কারণে দেশ ও দেশের মানুষ উপকৃত হবে।’
SOURCE : কালের কণ্ঠবসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে উপকূলীয় দরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন প্রদান
Bashundhara Group Provides Training and Sewing Machines to Poor Coastal Women
৫৩ লাখ টাকার সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের
Bashundhara Foundation Distributes Tk 5.3 Million in Interest-Free Loans
বসুন্ধরা গ্রুপের শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছে জাবির ১১৬ জন শিক্ষার্থী
Bashundhara Group Supports 116 JU Students with Scholarships
কসবায় বসুন্ধরার সহায়তায় চক্ষু চিকিৎসা পেল ৫০০ রোগী
500 Patients Receive Eye Treatment in Kasba with Bashundhara Group’s Support
৬০ জন দরিদ্র মহিলাকে সেলাই মেশিন দান করলো বসুন্ধরা শুভসংঘ
Bashundhara Shuvosangho Donates Sewing Machines to 60 Poor Women in Bancharampur